দীপা:
হ্যা মিতা দি বোলো
মিতা :
দেখ, এখানে ইভেন্ট বা প্রোগ্রামগুলোর কি
হবে ভেবেছিস?
দীপা:
কেন, আউটডোর গ্যাদারিং তো হচ্ছেই আজকাল,
বাকি সব ও নিশ্চই
ঠিক হয়ে যাবে
মিতা :
দেখ, এখন সবাই বলবে
ছোট ছোট GROUP এ
গ্যাদারিং করতে। তখন এই নিউ
জার্সির ছোট ছোট বাঙালি
GROUP গুলো কিন্তু হেভি
পপুলার হবে
দীপা:
হা, ডিসগাস্টিং, এতো এতো বাঙালি
GROUP আর ক্লাব কোথা
থেকে যে আসে ??
মিতা :
জানিস না আবার, 10
টা বাঙালি হলেই বলে GROUP,
কুড়িটা বাঙালি হলেই ক্লাব তারপরে
সেখানে দলাদলি, আর তারপরে আরেকটা
ছোট রেবেল GROUP
দীপা:
হা জানি তো, আমাদের
ক্লাব থেকেই
তো তোমাদের ক্লাব টা break আউট করেছিল না
বছর কুড়ি আগে?
মিতা :
এই, যা জানিস না
তাই নিয়ে বক বক
করিস কেন বলতো? কুড়ি
বছর আগে তুই এখানে
ছিলিস? তোদের ক্লাব এর পুরোনো হর্তাকর্তা
সবাই আমার বাড়িতে কতগুলো
potluck করেছে জানিস?
দীপা:
আচ্ছা বাদ দাও পুরোনো
কাসুন্দি ঘেটে কাজ নেই
। তুমি কি বলবে
বলছিলে?
মিতা :
বলছি এই ক্রাইসিস এর
সময়ে আমরা সব বিভেদ
ভুলে একটা জয়েন্ট কিছু
ইভেন্ট করি, এই ছোট
ক্লাব গুলো মাথাচাড়া দেয়ার
আমরা সবাইকে স্টিম রোল করে দেব
দীপা:
আইডিয়া টা দারুন, কিন্তু
কি করবো ? পয়লা বৈশাখ, পঁচিশে
বৈশাখ সব তো হয়ে
গেলো , পুজো আসতে অনেক
দেরি,
মিতা :
ফান্ড রেসিং করবো রে ।
কিছু টাকা ও আসবে,
আর সোশ্যাল মিডিয়া তে দারুন পাবলিসিটি
ও হবে
দীপা:
হা, তার ওপরে তোমাদের
ক্লাব এর তো প্রচুর
স্পনসর আর প্রচুর ফলোয়ার।
ওদের পুরোদমে কাজে লাগাতে হবে
কিন্তু
মিতা :
তোদের ক্লাব এর কালচারাল প্রোগ্রাম
গুলো দারুন হয়, তোদের সব
কটা ভালো সিঙ্গার আর
ডান্সার লাগবে কিন্তু, এখন
তো দেশ থেকে আর্টিস্ট
আনা যাবে না,
দীপা:
ওকে। সানডে সকালে কথা বলছি
***********************************************
দীপা:
এই সীমা শোন, আমরা যে গার্লস
জুম্ মিটিং এ পরের মাসের ফান্ড raiser টা নিয়ে কথা
বলছিলাম, ওটায় কিন্তু তোকেই
anchoring করতে হবে। আর
ওপেনিং ইন্ট্রোডাকশন ও
সীমা:
আমি? কেন তোমার বেস্ট
ফ্রেন্ড করবে না?
দীপা:
বেস্ট ফ্রেন্ড না ছাই! তুই
আমার কলেজের জুনিয়র, আমার ছোট বোনের
মতো, তাই তোকেই বলছি। আমি
লাস্ট 3 মাসে এতো
গুলো রান্নার ছবি পোস্ট করলাম,
এতো গুলো শাড়ী চ্যালেঞ্জ
পোস্ট করলাম, একটাও লাইক দিয়েছে?
সীমা:
ও বেচারি অফিস নিয়ে এতো busy দেখার
টাইম পায়নি হয়তো
দীপা:
সে যাই হোক, শোন
তুই খুব ভালো কানেক্ট
করতে পারিস অডিয়েন্স এর সঙ্গে, প্লাস
তুই এতো famous হয়েছিস শর্ট ফিল্ম করে
সীমা;
আচ্ছা আমাদের এই ফান্ড রেসিং
টা কিসের জন্য হবে?
দীপা;
ভালো কথা, ওটা তো
জিগেস করাই হয়নি ।
দাঁড়া
***********************************************
মিতা :
হ্যা রে বল
দীপা:
মিতা দি, বলছিলাম কি এই ফান্ড
রেসিং টা কিসের জন্য
হবে?
মিতা :
কেন? ভিক্টিম দের সাহায্য করার
দীপা:
করোনা র না এমফান
এর ?
মিতা :
যা হোক একটা কিছু
করলেই হয়
দীপা:
অলরেডি কিন্তু কয়েকটা ফান্ড
রেসিং হয়ে গেছে এই
সব নিয়ে
মিতা :
তাহলে নেপোটিজম ভিক্টিম দের জন্য?
দীপা:
নেপোটিজম ভিক্টিম দের জন্য ফান্ড
রেসিং ?
মিতা :
হা, বলিউড এর যা গ্ল্যামার,
আর বাঙালি রা আজকাল গ্ল্যামার
জগতের এর ফ্যান , ফান্ড
রেসিং এর টাকা দিয়ে
গরিব লোকদের বাড়ি বানাবো বললে
কেউ টাকা দিক বা
না দিক, ফান্ড রেসিং
এর টাকা দিয়ে বলিউড
নেপোটিজম ভিক্টিম দের হেল্প করবো
বললে সবাই দেবে
দীপা:
কিন্তু এটা করে কি
লাভ হবে?
মিতা :
বলিউড এর নেপোটিজম ভিক্টিম
অভিনেতা অভিনেত্রী রা ফেইসবুক এ
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবে, এটা বললেই সবাই
ঝাঁপিয়ে পড়বে
দীপা:
বলছো?
মিতা :
দরকার হলে এটাও বলবো
যে ইরফান খান এর পরিবার
কে টাকা পাঠানো হবে
দীপা:
ইরফান খান তো ক্যান্সার
এ মারা গেলেন ।
নেপোটিজম এর সঙ্গে কি
সম্পর্ক
মিতা :
ধুর লোকজন অত মনে রাখে
না। ভালো
অভিনেতা ছিলেন, অসাধারণ কিছু সিনেমা করেছেন, ফ্যামিলি ব্যাকআপ নিয়ে বলিউড এ
আসেন নি , মারা গেলেন
- এই সব কটা যোগ
করলে তো নেপোটিজম দাঁড়ায়
নাকি ?
দীপা:
আচ্ছা দাড়াও তোমার সঙ্গে রবিবার ডিটেল এ কথা বলছি
***********************************************
দীপা:
ফান্ড রেসিং এর agenda টা আমরা
ওয়ার্ক আউট করছি । তুই তোর মতো স্ক্রিপ্ট লিখতে থাক
সীমা:
আচ্ছা দীপা দি, এই
ফান্ড রেসিং এর টাকাটা কিভাবে
দুটো ক্লাব এ শেয়ার হবে
দীপা:
টাকা উঠলে তো শেয়ার
হবে। সবাই
আসবে, ফ্রি তে ইভেন্ট
দেখবে, দেখে বাহবা দিয়ে
চলে যাবে, আমাদের ও ঝক্কি কম।
সীমা:
তাহলে পুরো arrangement ফ্লপ?
দীপা:
ফ্লপ কেন? সোশ্যাল মিডিয়া
তে সবাই দেখবে এতো
ভালো ইভেন্ট হলো, নেক্সট পুজো
যখন হবে সবাই আমাদের
প্রোগ্রাম দেখতেই আসবে
সীমা:
কিন্তু কোরোনার জন্য যারা রোজগার
হারালো, এমফান এ যাদের বাড়ি
ঘর ভেসে গেলো, তাদের
জন্য আমরা কি কিছু
করবো না ? যখন তুমি
কলেজ এ আমাদের লিডার
ছিলে,
দীপা: উফফ এখন কি আর ওই ছাত্র রাজনীতি করার মতো বয়েস আছে? বিপ্লব আমি এখনও করি কিন্তু সেটা with sophistication। সমস্ত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমি আজও গর্জে উঠি - সোশ্যাল পার্টি থেকে সোশ্যাল মিডিয়া সব জায়গাতে
সীমা:
তুমি কিরকম চেঞ্জ হয়ে গেছো, জানো। সোসালিষ্ট
লিডার থেকে কি
করে এরকম সোশ্যাল লিস্ট
এর লিডার হয়ে গেলে?
দীপা:
চেঞ্জ আমি একা হয়েছি?
তোদের শিবু দা হয়নি? দুবছর ধরে স্টুডেন্ট ইউনিয়ন
চালালো কমিউনিস্ট চিন্তাধারায়, আর আজকে ক্যাপিটালিস্ট
হয়ে বসে আছে?
সীমা:
কি বলছো তুমি? শিবু দা ক্যাপিটালিস্ট?
দীপা:
ক্যাপিটাল জমা করচে রে,
আজকাল কলেজ এর যা
খরচ, এখন থেকে প্রানপনে
পয়সা জমাচ্ছ বাচাদের জন্য । যে
আগে প্রতি শুক্রবার আমাকে সিনেমা দেখতে নিয়ে যেত, সে
আমায় লাস্ট ৬ বছরে একটাও
সিনেমা নিয়ে যায় নি
। এখন বলে যে
অনলাইন আসা অবধি অপেক্ষা
করতে, বাজে খরচ করা
যাবে না এখন ।
সীমা: আর মনে করো, একদিন তুমি ডাক তুলেছিলে "নিপীড়িতদের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিতে হবে"
দীপা:
দেখ, রোমান্টিক ফুলিসনেস এর দিন গেছে।
ব্যাগ এ
দুশো বা পাঁচশো টাকা
সম্বল হলে নিজেকে
বিলিয়ে দেয়ার কথা বলা খুব
সহজ, কিন্তু দুশো বা পাঁচশো
যখন দুহাজার বা পাঁচ হাজার
হয়ে যায়, টাকাটা যখন
ডলার হয়ে যায়, মাথার
ওপরে বাবা মা র
ছাতা থাকে না, নিজের
সংসারের দায়িত্ত্ব এসে যায়, তখন
না এইসব বিলিয়ে দেয়ার
কথা বার্তা খুব কঠিন হয়ে
দাঁড়ায়
সীমা:
কয়েকদিন আগে যে ফেইসবুক
এ দেখলাম তুমি ভারত সেবাশ্রম
এ পঞ্চাশ
হাজার টাকা দিয়েছো
দীপা:
সত্যি কথা বলতে কি,
আমার ডোনেশান-ও আমার স্ট্যাটাস
মেইনটেইন করার একটা চেষ্টা। লোকে
দেখবে যে আমি কত
ভাবছি সমাজের জন্য, তাই বাধ্য হয়ে
বাকিরাও স্টেটাস দেখানোর জন্য NGO তে টাকা দেবে
। এইভাবেই আবার বিপ্লব আসবে
সীমা:
সত্যি বলতো , তোমার এই জীবন টা
ভালো লাগে?
দীপা:
নিশ্চই । খারাপ কি
বলতো জীবন টা?
সীমা:
আগে তোমার পাশে দাঁড়ানোর মতো
অনেক বন্ধু ছিল…….
দীপা:
এখনো আছে, একবার খালি
বলতে হয় 'আয়রে সেলফি
তুলবো ' - কত্ত বন্ধুরা সারি দিয়ে এসে দাঁড়ায় আমার পাশে
সীমা:
আমি সত্যিকারের বন্ধু বলছিলাম…..
দীপা:
ধুর পাগলী, যেটা সোশ্যাল মিডিয়াতে
দেখা যায় সেটাই তো
সত্যি রে
সীমা:
তুমি যে বলেছিলে এমন
একটা জীবন দেখতে চাও
যেখানে যে কোনো class divide থাকবে না। কি একটা বলতে তুমি "দরিদ্র আর ধনীর শ্রেণীভেদ
আর থাকবে না"
দীপা:
নেই তো। আজকাল এখানে
সবাই শুধু বিত্ত্ববানদের শ্রেণীভেদ
করে। কার একটা গাড়ি
আর কার দুটো গাড়ি,
কার দুটো বেডরুম কার
তিনটে বেডরুম আর কার চারটে
বেডরুম
সীমা:
তুমি যে স্বপ্ন দেখতে
অশিক্ষা দূর করার
দীপা:
ওটা তো ছোটবেলার immaturity । এতো বোকা
ছিলাম, ভাবতাম শিক্ষা মানে মনের বিকাশ,
শিক্ষা মানে সামাজিক শিকল
ভাঙার প্রয়াস
সীমা:
তো সেখানে ভুল কোথায়?
দীপা:
ভুল, সব ভুল ।
এখন শিখে গেছি যে
শিক্ষা হলো পয়সা কমানোর
প্রয়াস, কিছু মেকি সামাজিক
স্টেটাস এর পাথেয় , যার
শেষ পরিনাম নিজেকে আরো হাজারটা সামাজিক
শিকলে বেঁধে ফেলা
এদেশের
so-called শিক্ষিত
বাঙালিদের দেখে ভুলটা বুঝে
গেছি, অপ্রতিষ্ঠিত অশিক্ষিত লোকগুলোই ভালো
আছে। ওদেরকে আর আমাদের মতো
শিক্ষিত করে কাজ নেই