Saturday, April 4, 2020

করনা কালের কথা

স্থান - করনা আক্রান্ত কোনো এক শহর
কাল - করনা মহামারীর যুগ
পাত্র - করনা জনিত lockdown এ গৃহবন্দী কিছু মানুষ
                                                                                                                                   
 **************** শনিবার দুপুর  *************

রাহুল : এই শুনছো, আজকে সন্ধ্যেবেলায় কিন্তু আমি busy থাকবো। কোনো দরকারি কাজ থাকলে আগেই বলে রেখো
সীমা : তুমি তো এমনিও বাড়ির কোনো কাজে লাগোনা, বরং যেদিন কোনো কাজ করার চেষ্টা কর সেদিন আরো দশটা বেশি কাজ করতে হয় আমাকে।
রাহুল : তাহলে সন্ধ্যেবেলায় আমায় কিছু করতে হচ্ছেনা, ফাইনাল তো?
সীমা : হ্যা রে বাবা। কিন্তু তুমি কি এমন কাজে busy থাকবে?
রাহুল : দুদিন আগেই বলেছিলাম তো , আজকে আমরা বন্ধুরা হ্যাপি hour  করবো
সীমা : সে যা খুশি করো। কিন্তু এখন করোনা lockdown  চলছে মনে আছে তো?
রাহুল : হ্যা রে বাবা। মনে আছে
সীমা : একজন আরেকজন এর এঁঠো গ্লাস থেকে মদ খেয়ো না। সবাই দূরে দূর বসবে । আদিখ্যেতা করে কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরবে না কিন্তু। আর বাড়িতে ঢোকার সময় বাগানের যে পাইপটা আছে, ওটা দিয়ে ভালো করে গা হাতপা ধুয়ে ঘরে ঢুকবে। আমি সাবান রেখে দেব ওখানে।
রাহুল :  ধুর বাবা, আমি বাইরে যাচ্ছি না। ভিডিও চ্যাট এ সবাই হ্যাপি hour  করবো।
সীমা : ভিডিও চ্যাট এ হ্যাপি hour ?
রাহুল : কেন? অফিস এর মিটিং যখন ভিডিও চ্যাট এ হচ্ছে, মাল এর পার্টি কেন হবে না।
সীমা : ধুর যা খুশি করো গিয়ে যাও

 ****************** শনিবার রাত  ***********

কোরাস : চিয়ার্স !!!
গৌরব : উফফ অনেকদিন পরে সবাইকে গ্লাস হাতে দেখছি। দারুন জমেছে কিন্তু ।
দীপ: হ্যা , এরকম  একটা করে ঠেক দরকার। frustration দূর করার জন্য।
গৌরব : তোর আবার কি frustration ?
দীপ: frustration কি শুধু আমার একার? দিনের পর দিন বাড়িতে আটক। কিছু করার নেই।
রাহুল : তাও আবার সঙ্গে গিন্নি। অফিস টাইম টা atleast গিন্নির মুখ ঝামটা শুনতে হতো না, এখন তো সবসময়ে চলছে।
গৌরব : আমার কিন্তু খারাপ লাগছে না। বৌ অফিস যাচ্ছে না। দুবেলা ভালো ভালো খাবার খাচ্ছি। বাচ্চাগুলোর সঙ্গে অনেক খেলা করার সময় পাচ্ছি। আগে তো অফিস যাতায়াত এ ৩ ঘন্টা বেরিয়ে যেত।
দীপ: ভাগ্য করে বৌ বাচ্চা পেয়েছিস ভাই। আমার বৌ বাচ্চা কেউ তো আমায় সহ্যই করতে পারছে না। আমার ওয়ার্ক ফ্রম হোম এর জন্য নাকি ওদের সিরিয়েল কার্টুন ইত্যাদি সব বন্ধ হয়ে গেছে
রাহুল : এই, নিজেকে ট্রাজিক নাটক এর ক্যারেক্টার দেখানো বন্ধ কর। মোহনা তো দিব্ব্যি ভালো মন্দ রান্না করছে। আজকে সকালেই বৌদের group  চ্যাট এ দেখিয়েছে
দীপ: আরে নারে ভাই, তোরা তো ভেতর এর খবর রাখিস না।

*********** ফ্ল্যাশ ব্যাক : শনিবার  সকাল *************

দীপ: আরিব্বাস ! লুচি!!
মোহনা: এই একদম হাত দেবে না।
দীপ: আরে হাত ধুয়ে এসেছি।
মোহনা: হোক
দীপ: সত্যি বলছি। সাবান দিয়ে কুড়ি সেকেন্ড ধুয়েছি।
মোহনা: আরে রাক্ষস এর মতো খাই খাই করোনা । এগুলো বন্ধুদের  সঙ্গে চ্যাট এ দেখাবো।
দীপ: ফটো তুলে নিচ্ছি দাড়াও। ওটা শেয়ার করে দিয়ো। তারপরে প্লেট টা এদিকে পাস করো
মোহনা: না, ফটো নিলে হবে না। আজকে আমাদের নিউ জার্সির মেয়েদের group এর লাইভ চ্যাট হবে, সেখানে দেখাবো ; কালকে রবিবার , কালকে আমরা টেক্সাস এ যেখানে থাকতাম সেই group এর সঙ্গে চ্যাট হবে, সোমবার আমার কলকাতার স্কুলের group এ চ্যাট হবে।
দীপ: যাহ শালা , এক লুচি দিয়ে তিনদিন চ্যাট হবে।কিন্তু খাওয়া যাবে না?
মোহনা: তোমার খাবার টেবিল এ রাখা আছে তো, খেয়ে নাও ওটা
দীপ: একি? এটা তো দুধ কর্নফ্লেক্স !!
মোহনা: এই একদম লোভ কোরোনা সোনা । মনে নেই তোমার এখন কলেস্টেরল বেড়েছে, ডাক্তার কি বলেছে? তেলের জিনিস খাওয়া বারণ । দুধ কর্নফ্লেক্স খেয়ে নাও, ওবেলা নাহয় তোমাকে চা বানিয়ে দেব।

*****************  শনিবার রাত  **********************

দীপ: (দীর্ঘশ্বাস , গ্লাস এ চুমুক)
গৌরব : একি, তুই জল খাচ্ছিস কেন?
দীপ: lockdown এর আগে স্যানিটাইজার কিনতে ভুলে গেছিলাম, বৌ তাই বলেছে আর মদ খাওয়া যাবে না, বাড়ির মদগুলো এখন নাকি স্যানিটাইজার যতদিন না নতুন স্যানিটাইজার কিনছি
গৌরব : দুঃখ করিস না। এটলিস্ট একটু মদ খাওয়া তো কম হবে
রাহুল : এই চুপ কর ।  সব ব্যাপারে একটা পসিটিভ অ্যাঙ্গেল খুঁজে বার না করলেই নয়?
গৌরব : বাড়িতে বসে একটা সিম্পল, শান্তির জীবন কাটাচ্ছি আমরা। তুই এতো নেগেটিভ হচ্ছিস কেন?
রাহুল : এতো এতো লোক মরছে, সেখানে তুই পসিটিভ গল্প দিছিস?
গৌরব : তুই বুঝি ফিশ ফিঙ্গার আর whiskey খেয়ে সেই মরা লোকগুলো র শোকপালন করছিস?
রাহুল : আরে এমনিতে আমি দুঃখিত ওদের জন্য। ফিশ ফিঙ্গার আর whiskey টা তো হ্যাপি hour করার জন্য।
গৌরব : হ্যাপি hour টা হ্যাপি হয়ে কর না তাহলে, কাঁদুনি গাইছিস কেন?
রাহুল : দুসপ্তাহ এইভাবে ভালো লাগছে?
গৌরব : তোর প্রব্লেম টা কি? বাইরে পার্টি না করে বাড়িতে সাধারণ ঝোল ভাত খাচ্ছিস এটা প্রব্লেম ? নাকি বাইরের লোকের সঙ্গে সময় না কাটিয়ে ফ্যামিলির সঙ্গে সময় কাটাতে হচ্ছে সেটা প্রব্লেম?
রাহুল : না, সেটা প্রব্লেম নয়। নিজের ইচ্ছেয় ফ্যামিলির সঙ্গে টাইম কাটানো ভালো। কিন্তু বাইরের কোনো ফ্যাক্টর যদি সেটা করতে বাধ্য করে, সেটা প্রব্লেম।
গৌরব : নিজের লাভ ম্যারেজ করা বৌয়ের সঙ্গে সময় কাটানো টা যদি তোর বাধ্যতা মনে হয়, সেইটা আসল প্রব্লেম।
দীপ: এই এবার থাম দেখি তোরা
রাহুল : এই দেখো, আমি কিন্তু কিছু বলিনি, আমায় পার্সোনাল এটাক করা হচ্ছে , I feel vulnerable in this group
দীপ: উফফ করনার চক্করে অনেক কিছু চেঞ্জ হলো, কিন্তু মাল খেয়ে তোদের  ঝগড়া করাটা এখনো চেঞ্জ হলো না
গৌরব : YES এগুলো eternal  ব্যাপার । যা কিছু eternal করনা তাদের কিস্যু করতে পারবে না
রাহুল : যেমন শনিবার মাল খেয়ে রবিবার সকালের বাজার না করায় গিন্নির মুখঝামটা , ওটাও eternal
দীপ: এই চল, আজকে এবার ওঠা যাক। বাজার করার কথা মনে পরে গেলো।
রাহুল : কালকে বাজার যাবে নাকি? এখন তো lockdown
দীপ: আরে না রে, অনলাইন অর্ডার করবো। এই বেশি রাত এ অর্ডার করার সুবিধে। সকাল এ চান্স পাইনা
রাহুল : সেই ভালো। এখন কেউ বাড়ি থেকে না বেরোনোই উচিত।
গৌরব : বেশ, বাড়িতে বসে quality family time কাটাও সবাই
দীপ: যা কিছু কেনা দরকার, অনলাইন কেনো সবাই । বাড়ি থেকে বেড়িয়োনা
রাহুল : frustration এলে বাড়িতে বসে পার্টি করো, সোশ্যাল পার্টি কোরোনা
সবাই : (গ্লাস তুলে) এইভাবেই বিনাশ হবে "করনা" । চিয়ার্স !!

3 comments:

  1. একদম ফাটাফাটি হয়েছে গুরু। আর ওই রান্নার পড়বো তার জন্য আপনি পুরস্কার পাবেন

    ReplyDelete

বিদেশে বাণী বন্দনা

  প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে, বিশেষত আমেরিকার প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে , বাঙালিয়ানা আর সংস্কৃতি নিয়ে চর্চা টা একটু বেশি রকমের হয়ে থাকে। কলকাতায় ...