Saturday, August 8, 2020

দূর্গা - অসুর সংবাদ

                      নারদ : এই অসুর, ওঠ না, আর কত ল্যাদ খাবি

অসুর: ও বাবা, তুই এসেছিস ? কি হলো আবার ?
নারদ : কি হলো আবার ? শরৎকাল, আশ্বিন মাস, এখন কি হয় সেটা ভুলে গেলি?
অসুর: না, কিছু ভুলিনি , বছর বছর ওই দশটা হাত আর গাদাকতক প্রিমিটিভ weapons আর একটা বুড়ো সিংহকে দিয়ে আমার মতো বীরপুরুষ কে কুপোকাত করার চক্রান্ত
নারদ : তাহলে এবার ওঠ, একটু গতর টা নাড়াচাড়া কর, জিম এ যা, বডি বানা, নইলে তো ফেসবুকে ভালো ফটো আসবে না 
অসুর:  এবছর যে করোনা মহামারী, চারদিকে LOCKDOWN আর QUARANTINE , এর মধ্যে পুজো হবে ?
নারদ : একি কথা, QUARANTINE বল আর করোনা বল , পুজো হবে না বললে বাঙালি ফেস্টিভ্যাল করবে কি করে ? 
অসুর: ধুত্তোর আমি যাবোনা , দুর্গার সঙ্গে মারপিট টা জুম্ মিটিং এ করা যাবে না? কলকাতা গেলেই তো দুসপ্তাহ QUARANTINE , ফিরে এসেও আবার QUARANTINE 
নারদ : জানি রে জানি । ঐজন্যই তো এইবছর মহালয়ার পাঁচ সপ্তাহ পরে পুজো , মাঝের সময়টা QUARANTINE 
অসুর : QUARANTINE তো দুসপ্তাহ হয় , এতদিন কেন? 
নারদ : পুজো শপিং করার জন্য, আগে তো সবাই ভিড় করে গুতোগুতি করে কেনাকাটা করতো , কিন্তু এখন তো সেসব হবে না।

                     অসুর :  কেন?

নারদ : সোশ্যাল ডিস্টেন্সিঙ করতে হবে, অল্প অল্প লোক দোকানে ঢুকবে তাই বেশি সময় দেয়া 
অসুর :সোশ্যাল ডিস্টেন্সিঙ ?
নারদ :  হ্যা রে , এটাই তো নিউ নরমাল 
অসুর: তাহলে এই নিউ নরমাল এর যুগে সোসিওপলিটিক্যাল stereotype ভেঙে আমাকে এবার জিততে দেয়া হোক
নারদ: ওবাবা, এইসব খটোমটো শব্দ কেন? একটু সাদা বাংলায় জলবৎ তরলং করে বল না
অসুর: উহু, আমি এইভাবেই বলবো। ইংরেজি ওয়ার্ডস আর phrases use না করলে আজকাল ভদ্র সমাজে পাত্তা পাওয়া যায় না । বাংলা কথা বলা লোকদের কেউ পাত্তা দেয়না ।
নারদ: একি কান্ড, তুই তো দেখছি বোকা বাক্সর পন্ডিত দের মতো কথা বলছিস , মধ্যবিত্ত বাঙালি অসুর, অসুর এর মতো থাকনা , ভদ্রলোক হওয়া দরকার কি তোদের মতন অসুরদের ?
অসুর: ভদ্র্লোকরাই তো আসল অসুর রে, যেইরকম দুর্নীতি আর মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে এই ভদ্রসমাজে , অসুররা নিজেদের identity হারিয়ে ফেলবে এরকম না হতে পারলে
নারদ: আচ্ছা ঠিক আছে, সেইসব কথা থাক। কি চাই তোর সেটা বল
অসুর: বলছি তো। আমি এইবারে হারবো না, আমায় ম্যাচফিক্সিং করে এবারে জিতিয়ে দে
নারদ : সেকি কথা, নারী শক্তির পরাজয়? আসুরিক শক্তির জয়? আমাদের হেরিটেজ এর কি হবে?
অসুর: হেরিটেজ বিলডিং ভেঙে তো ফ্ল্যাট আর মাল্টিপ্লেক্স তৈরী হচ্ছে, তোরা আবার হেরিটেজ নিয়ে কথা বলিস কি রে  
নারদ : আরে সেই হেরিটেজ নয়, আমাদের ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলছি। ঐতিহ্য কি ভেঙে দেয়া যায় রে?
অসুর: এই বেশি বাতেলা মারিস না তো , তোরা বিদ্যাসাগর এর মূর্তি ভাঙতে পারিস, আর একটু ঐতিহ্য ভাঙতে পারবি না ? হ্যারে, তোরা পুজো করিস তো প্রাইজ পাবি বলে, তাই নিয়ে এতো ঢং করার কি আছে?
দূর্গা : এই অসুর, কি বক বক করছিস বল তো তখন থেকে ? আর এই নারদ, ওকে রেডি করিয়ে রাখিস নি কেন? 
নারদ : আরে আমি কখন থেকে try করছি, ও বলছে কিনা ম্যাচফিক্সিং করে ওকে জিতিয়ে দিতে হবে 
দূর্গা : এই যে মাথামোটা, ম্যাচফিক্সিং করবে ?
অসুর: হ্যা, করবো।
দূর্গা : ম্যাচফিক্সিং আজকাল বেআইনি /  যদি আমি রিপোর্ট করি তোর কিন্তু জেল হয়ে যাবে
অসুর: জেল এ যাওয়া তো গর্বের ব্যাপার। স্বদেশী আন্দোলন এর সময় থেকে আজ পর্যন্ত্য দেখসি, সমস্ত নাম করা নেতারাই তো জেল এ যায় 

                       নারদ : আগে  কিন্তু criminal দের সোশ্যাল মিডিয়া তে ট্রলিং হতো না।  টুইটার এ                              UNFOLLOW করার ভয় ও ছিল না , আজকাল কিন্তু এই সব হচ্ছে  

দূর্গা : সোশ্যাল মিডিয়া তে UNFOLLOW হয়ে গেলে  কিন্তু public sympathy পাবি না, স্পনসর ও পাবি না
অসুর: ও বাবা, তাহলে জেল চাই না 
দূর্গা : নে, রেডি হো, এবারে 
অসুর : এখন কেন রেডি হব? নারদ বললো যে  পুজো শুরু হতে ঢের দেরি আছে 
দূর্গা :  ব্যাকডেটেড মুখ্যু তুমি । প্রেস কনফারেন্স, মিডিয়া কাভারেজ , campaigning, এইসব শোনোনি ?
মেয়ে : এক মিনিট , এক মিনিট,  এইসব কি হচ্ছে?  প্রসেস আছে তো 
নারদ : আজ্ঞে আপনি কে দেবী?
মেয়ে: আমি জীবন বাংলা চ্যানেল থেকে এসেছি, দেবী আর অসুর এর বিগ ফাইট এর লাইভ টেলিকাস্ট করবে আমাদের চ্যানেল , এবং এই ফাইট টা নিবেদন করছে handloom  হ্যান্ডওয়াশ , surprise  সাবান,  চরম চানাচুর 
নারদ : আরে দাঁড়ান দাঁড়ান, জীবন বাংলা ব্যাপার টা কি? আর দেবী অসুর এর লড়াই এর সঙ্গে সাবান আর চানাচুর র কি সম্পর্ক?
মেয়ে : কোথাকার ব্যাকডেটেড মানুষ হে আপনি? জীবন বাংলার নাম শোনেন নি? World er best  বাংলা চ্যানেল আমাদের জীবন বাংলা । বিজ্ঞাপন মানেই জীবন বাংলা , আমাদের চ্যানেল সেই number 1 চ্যানেল যেটা, এমা উঠে গেছে     
নারদ : যা , চ্যানেল উঠে গেছে ?
মেয়ে : আরে দূর, আমার নেইলপলিশ টা উঠে গেছে, খেয়াল করলাম এখুনি। 
নারদ : কি বিরক্তিকর ব্যাপার। আরে এই বিগ ফাইট এর মধ্যে আপনি বাগড়া দিচ্ছেন কেন?
মেয়ে: কিছু জানেন না আপনি, আজকাল যেকোনো বিগ ফাইট এর আগে টক্ শো হয় 
নারদ : টক ডাল জানি, কিন্তু টক্ শো? 
মেয়ে: সিনেমার আগে যেমন ট্রেইলার হয়, সেইরকম বড় ঝাড়পিট এর আগে আমার দুপক্ষ কে টিভি তে এনে ঝগড়া করাই, এতে TRP বাড়ে 
নারদ : ঝগড়া থেকে TRP ? আমি তো শুনেছিলাম যে বুদ্ধদেব গান্ধীজি র দেশ এ সবাই চায়  শান্তি আর ভালোবাসা 
মেয়ে : ঐসব বলার জায়গা শুধু পরীক্ষার খাতা আর ইতিহাস এর পাতা । রিয়েল লাইফ এ ঝগড়া ঝাটি কেচ্ছা কেলেঙ্কারি - এইসব নিয়ে PNPC  - এগুলো তো পাবলিক খায় 
নারদ : ও বাবা ঝগড়া লাগানোর কাজ যদি TV চ্যানেল করে তাহলে আমি এবারে কি করবো ? আমার ও তো দেখছি আইডেন্টিটি ক্রাইসিস !!
মেয়ে : নিন, শুরু করুন। একদিকে দেবী () একদিকে অসুর (), আর এই যে মশাই আপনি কোন দিকে ?
নারদ : আমি আবার কোন দিকে ?
দূর্গা : এই নারদ, তুই কি অসুর নাকি ?
নারদ : এই  না না 
দূর্গা : তাহলে তুই আমার দিকে 
অসুর : ওই নারদ, পাল্টিবাজ কোথাকার, তুই মহিলা না পুরুষ ? কোন দলের ?
মেয়ে : Look, আপনারা ক্যান্ডিডেট কে প্রেসার দিচ্ছেন, ডিসকোয়ালিফাই করে দেব। হ্যা আপনি বলুন তো আপনি কোন টীম এর?
নারদ ; আমি ভাবছিলাম যে নিউট্রাল থাকি, নাকি ?
মেয়ে : সেরকম হয় নাকি?
নারদ: এই তো কয়েকদিন আগেই কলকাতায় একটা চরম দলাদলি হলো।  এক দল জিগেশ করলো তোরা বাঙালি না গুজরাটি কোন দলে ? একদল জিগেশ করলো যে তোরা ওই মহিলার দলে নাকি আমাদের পুরুষ সিংহের দলে? 
মেয়ে: তারপরে?
নারদ: তারপরে আবার কি, কলকাতার ওয়ার্ল্ড ফেমাস  কিছু লোক বললো আমরা নিউট্রাল । দলাদলি শেষ হয়ে গেলো, কিন্তু আজ অবধি কেউ বুঝতে পারেনি এরা কোন দলে
মেয়ে : তাহলে আপনি চিয়ারলিডার টীম এ 
নারদ: চিয়ারলিডার? সেটা কি?
মেয়ে: যারা নিউট্রাল,  তাদের জন্য একটা  গ্ল্যামারাস টীম বানিয়েছি আমরা। They are so neutral, যে  ব্যাটসম্যান ৬ মারলে ও dance করে , ব্যাটসম্যান আউট হলেও dance করে । ক্রিকেটার দের জল খাওয়া থেকে ফিল্মস্টার দের মদ খাওয়া, সব কিছুতেই এরা cheer up করে mental support বাড়ায় । আপনি যান, আমার crew আপনাকে সব বুঝিয়ে দেবে 

                        নারদ: আচ্ছা আমি তাহলে cheer leader হয়ে যাই 

মেয়ে : যাই হোক, এবারে বিগ ফাইট এর টক্ শো । শুরু হোক। লেডিস ফার্স্ট 
দূর্গা : এই ফাইট এ আমি জিতবো, আমার জেতা উচিত। আমি রিপ্রেসেন্ট করি নারী শক্তি, আমি রিপ্রেসেন্ট করি নারী মুক্তি, আমি রিপ্রেসেন্ট করি ফেমিনিজম 
অসুর : নিকুচি করেছে তোর ফেমিনিজম এর । সবচেয়ে বড়ো ফেমিনিস্ট তো আমি। আমি বছর বছর এক মহিলার কাছে পড়ে পড়ে কেলানি খাই যাতে বাঙালি মহিলারা ফেস্টিভ্যাল স্পিরিট এ শপিং করতে পারেন, আর নিজেদের সুন্দরসুন্দর মুখগুলোর সেলফি আপলোড করতে পারেন 
মেয়ে : দারুন পয়েন্টস। রাউন্ড ১ অসুর 
দূর্গা : অত সহজ নাকি জেতা? হ্যারে অসুর, তোর পেছনে পার্টি ফান্ড বা ফিনান্সিয়াল ব্যাকিং আছে?
অসুর: না, আমার পেছনে মোষের ল্যাজ আছে 
দূর্গা: শুধু  ল্যাজে কি হবে? আমি ওয়াইল্ডলাইফ সাপোর্ট করি ।  সিংহ আছে । তোর কি ওয়াইল্ডলাইফ সাপোর্ট আছে?
অসুর : হ্যা, আছে তো। মাথায় উকুন আর পেট এ কৃমি আছে ।
দূর্গা : ইসঃ!
মেয়ে : রাউন্ড ২ দূর্গা 
অসুর: আমি জিতবোই । আমাকে জিততেই হবে। আমি রিপ্রেসেন্ট করি সাধারণ মানুষ কে। আমি বুদ্ধিজীবী নোই, আমি বোকা।মাথার বাইরে শিং আর ভেতরে গোবর। আমি সেই কমন ম্যান যে পড়ে পড়ে মার্ খায় যাতে ভদ্রসমাজ ফেস্টিভ্যাল করতে পারে । 
দূর্গা : পাবলিক সিম্প্যাথি নেয়া হচ্ছে? আমার সিচুয়েশন শুনবি? এই জীবন বাংলার সব কটা সিরিয়েল এর নায়িকাদের টোটাল যা ক্রাইসিস আমার নিজের ক্রাইসিস তার থেকে ও বেশি 
অসুর : কি ঢপ
দূর্গা : এই, তুই জানিস কিছু? আমার হাসব্যান্ড এমনিতে সেরা, কিন্তু লাইফস্টাইল সাধারণ বলে আমার বাবা এমন অপমান করেছে যে ও আর আমার বাপের বাড়ি যায়না কোনোদিন,

                       মেয়ে : Thats terrible.... 

দূর্গা : ছেলেটা র মুখেভাত দেবো, সেই অনুষ্ঠান এ এমন ক্রাইসিস পুরো মাথা ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি করতে হলো। 

                       নারদ : উফফ সে যা কান্ড  হয়েছিল, এখনো ভাবলে শিউরে উঠি  

দূর্গা :  নারীমুক্তি নারীশক্তি এইসব করার জন্য মেয়েদের অনেক পড়ালাম। বড়ো মেয়ে লেখাপড়া গান বাজনা, নাচ, আবৃত্তি, ছবি আঁকা , সব কিছুতেই তুখোড়, কিন্তু আজ অবধি পছন্দসই পাত্র 
পেলাম না। ছোট মেয়েটা বিয়ে করেছে , কিন্তু জামাই বাবাজীবন সবসময়ে শয়নে পদ্মনাভঞ্চ হয়ে শুয়ে থাকে , নয়তো এদিক ওদিক লীলাখেলা করে বেড়ায় 
অসুর : সত্যি নাকি? 
দূর্গা : তা নয়তো কি? এইসব চাপ দেখে আমার বর রোজ ওই শশান  এ বসে হ্যাপি আওয়ার করে। ওই আপদ নন্দী আর ভৃঙ্গী ও জুটেছে আস্কারা দেয়ার জন্য । 
অসুর: হ্যা রে দূর্গা, তোর এতো দুঃখ, তুই আমায় বিয়ে কর না?
দূর্গা : কি বলি? 
অসুর : দেখ, আমি রোজ রোজ হ্যাপি আওয়ার করবো না, গাঞ্জা ও খাবো না। প্লাস আমি অসুরদের রাজা, তোর বাপ্ পাহাড় দের রাজা, তাই অপমান ও করবে না ।একদম দারুন জুটি 
দূর্গা : আহা, শখ কত ব্যাটা মোষের। নে  মর (ত্রিশূল )
অসুর: আরে একি করলি রে। প্রপোস করেছিলাম, না বললেই পারতিস, ম্যাক্সিমাম একটা চড় মারতে পারতিস, ত্রিশূল মেরে দিলি? কে আছিস জয়োধ্বনি দে ।
নারদ :: সে আবার কি। loser  দের আবার জয়োধ্বনি হয় নাকি? cheer leader হয়েছি যখন লিডার দের cheer করবো, loser দের cheer করবো কেন ? বোলো দূর্গা মাই কি জয় । আসছে বছর আবার হবে 

No comments:

Post a Comment

বিদেশে বাণী বন্দনা

  প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে, বিশেষত আমেরিকার প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে , বাঙালিয়ানা আর সংস্কৃতি নিয়ে চর্চা টা একটু বেশি রকমের হয়ে থাকে। কলকাতায় ...