পর্যটকদের
প্রিয় শহর পোর্টল্যান্ড । আমেরিকার
উত্তর পূর্ব অঞ্চলে মেইন রাজ্যে অবস্থিত এই শহর টি একদিকে সামুদ্রিক খাবার , অন্য দিকে Acadia ন্যাশনাল
পার্কের দ্বারদেশ হিসেবে পরিচিত ।
তাই হঠাৎ যখন অফিসের কাজ নিয়ে দুদিন পোর্টল্যান্ড যেতে হবে শুনলাম , মনে মনে অত্যন্ত পুলকিত হয়ে উঠলাম । দুদিন
ধরে সামুদ্রিক খাবার খাবো আর সেই সঙ্গে পাহাড় ও সমুদ্রের ধারে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলবো ভেবেই "সুদূরের পিয়াসী " মনটা বেশ "চঞ্চল" হয়ে উঠলো ।
প্রথম
দুদিন মনের আনন্দে বিভিন্ন প্রকার এর গলদা চিংড়ি আর কাঁকড়া খেয়ে কাটালাম । পোর্টল্যান্ড
অফিসের লোকজন ও দেখলাম খুবই আন্তরিক । প্রথম
দেখাতেই ওনারা বিখ্যাত সব স্থানীয় খাবার আর রেস্তোরার সন্ধান দিলেন । তারপর
থেকে নিয়মিত ভাবে ওনারা খোঁজ নিতেন সেই সব খাবার খেয়েছি কিনা । যদিও
ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা টি সফল হলো না । প্রথম
দিন ভীষণ ঠান্ডা এবং দ্বিতীয় দিন থেকে বৃষ্টি যোগ হওয়ায় আমি হোটেল এর নিরাপদ আশ্রয়ে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেছিলাম ।
এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে দেখলাম ঝোড়ো আবহাওয়া , সঙ্গে বৃষ্টি । ভাড়া গাড়িতে তেল ভরার জন্য নামতে হলো , আর মুহূর্তে ভিজে গেলাম । ওই ঠান্ডাতে ভেজা জ্যাকেট টুপি আর সোয়েটার পড়ে আধ ঘন্টা গাড়ি চালানোটা মনে হয়েছিল চরম দুর্গতি । কিন্তু পরে বুঝেছিলাম যে আগামী কিছু ঘন্টার তুলনায় এই আধ ঘন্টা কিছুই নয় । এয়ারপোর্ট ঢুকে মনে হলো যেন কোনো মৃত্যুপুরীতে প্রবেশ করছি ।চারদিকে একটা গা ছমছম করাঅন্ধকার । গাড়ি ফেরত দেয়ার কাউন্টারে গিয়ে শুনলাম যে একটা ট্রাক নাকি ঝড়ের মধ্যে দিকভ্রষ্ট হয়ে একটা ইলেকট্রিক পোলে ধাক্কা মেরেছে । তার ফলস্বরূপ সমস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে ।
ছোটবেলায়
কলকাতায় বড়ো হয়েছি । লোডশেডিং
এর অনেক স্মৃতি আছে ছোটবেলা
থেকেই । বিদ্যুৎ
বিভ্রাট মানেই ছিল পড়াশোনা থেকে ছুটি , বারান্দা বা ছাদ এ বসে রাতের
সৌন্দর্য্য বা চাঁদের আলো দেখে মুগ্ধ হওয়া । কিন্তু দেখলাম এয়ারপোর্ট এ বিদ্যুৎ বিভ্রাট
মোটেই এরকম সুখকর কিছু নয় । ভাড়া
গাড়ি ফেরত দেয়ার সময় জানতে পারলাম যে কম্পিউটার চলছে না , তাই ওনারা আমায় রশিদ দিতে পারবেন না । কোম্পানির কাজে এসেছি
তাই রশিদ ছাড়া টাকা পাবো না ভেবে মন ব্যাকুল হয়ে উঠলো । কাউন্টার
এর ভদ্রলোক জানালেন যে আমি যদি কারেন্ট আসা অবধি অপেক্ষা করি তাহলে অতি আনন্দের সঙ্গেই উনি আমায় রশিদ দেবেন । ভেবে
দেখলাম যে রশিদ এর জন্য প্লেন ছেড়ে দেয়া যায় না ।
তাই রশিদ এর মায়া ত্যাগ
করে চেক ইন করতে অগ্রসর হলাম ।
চেক
ইন কাউন্টার এ দেখি একই
অবস্থা ।কোনো
কম্পিউটার কাজ হচ্ছে না । এমার্জেন্সি সিস্টেমে শুধু এয়ারপোর্ট এর কনভেয়র বেল্ট , কন্ট্রোল রুম কন্ট্রোল টাওয়ার এর লাইট ইত্যাদি চলছে । আর
সেই সঙ্গে গুটিকতক সিলিং এর লাইট জ্বলছে । আজকাল
আমরা যেরকম মেশিন এ ক্রেডিট কার্ড
বা নাম দিয়ে বোর্ডিং পাস প্রিন্ট করি সেই রাস্তা বন্ধ । লোকজন
এক এক করে কাউন্টার এ যাচ্ছে , কাউন্টার
এর মহিলা ফোন করে হেড অফিস থেকে জেনে নিচ্ছেন সেই যাত্রীর কত নম্বর সিট । তারপরে
সাদা কাগজে সেই যাত্রীর
নাম আর সিট নম্বর লিখে মহিলা সই করে স্ট্যাম্প মারছেন । একদম
যেন ত্রিশ বছর আগের অবস্থা । বলাই
বাহুল্য যে এই চেক
ইন পদ্ধতি ৫ গুন্
বেশি সময় নিচ্ছে ।
তাই সমস্ত এয়ারপোর্টেই প্রচুর ভীড় , প্রচুর লাইন , আর সেই সঙ্গে লোকজনের প্রচুর বিরক্তি । বিরক্তির আরেকটা কারণ এমার্জেন্সি পাওয়ার এ এসি মেশিন চলছে না । তাই যাত্রীগণ অনেকেই এই গুমোট আবহাওয়ায় ঘামছেন, এবং আরো বিরক্ত হচ্ছেন । চেক ইন কাউন্টার এর সংকীর্ণ জায়গায় প্রচুর যাত্রীর এই ঘর্মাক্ত পরিস্থিতি, পুরো জায়গাটাকে আরো বিরক্তিকর করে তুলছে ।
সিকিউরিটি চেক এর অবস্থাও দেখলাম বিশেষ ভালো নয় | পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স স্ক্যান করে সমস্ত ঠিকুজি কুষ্ঠি বার করে ফেলা মেশিন গুলো আজ অচল । একজন বৃদ্ধ সিকিউরিটি অফিসার দুতিন রকম নীল বেগুনি আলোর টর্চ নিয়ে সবার পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন । ওনার মুখে গর্ব ও তৃপ্তি মিশ্রিত অভিব্যক্তি । আধুনিক যুগের মেশিন এর সঙ্গে আধুনিক যুগের সিকিউরিটি অফিসার গণও এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অচল হয়ে গেছেন । সবাই দল বেঁধে ওই বৃদ্ধ সিকিউরিটি অফিসার এর পেছনে দাঁড়িয়ে শিখছেন কিভাবে মেশিন ছাড়াও জাল পাসপোর্ট বা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ধরা যায় |
সিকিউরিটি চেক এর অবস্থাও দেখলাম বিশেষ ভালো নয় | পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স স্ক্যান করে সমস্ত ঠিকুজি কুষ্ঠি বার করে ফেলা মেশিন গুলো আজ অচল । একজন বৃদ্ধ সিকিউরিটি অফিসার দুতিন রকম নীল বেগুনি আলোর টর্চ নিয়ে সবার পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন । ওনার মুখে গর্ব ও তৃপ্তি মিশ্রিত অভিব্যক্তি । আধুনিক যুগের মেশিন এর সঙ্গে আধুনিক যুগের সিকিউরিটি অফিসার গণও এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অচল হয়ে গেছেন । সবাই দল বেঁধে ওই বৃদ্ধ সিকিউরিটি অফিসার এর পেছনে দাঁড়িয়ে শিখছেন কিভাবে মেশিন ছাড়াও জাল পাসপোর্ট বা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ধরা যায় |
যাই
হোক প্রায় দুঘন্টা ভেজা জামাকাপড় পরে ছিলাম । সিকিউরিটি
চেক এর পরে ভাবলাম বাথরুম এ কাপড় বদলে
নেবো ।সেখানেও
দেখি ঘোর বিপদ ।
বাথরুমের অল্প আলোতে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া এড়াতে কতৃপক্ষ বেশিরভাগ বাথরুম বন্ধ রেখেছেন ।
শুধুমাত্র একটি বাথরুম এমার্জেন্সি আলোতে উদ্ভাসিত ।
বলাইবাহুল্য সেখানে বিশাল লাইন
। হতাশ হয়ে
এয়ারপোর্টের একটা কোনায় গিয়ে ব্যাগ খুলে পোশাক বদল করা শুরু করলাম । হঠাৎ
করে সেই অন্ধকারের মধ্যেও দুজন এয়ারপোর্ট কর্মী এসে আমায় শাসিয়ে গেলেন যে আমি যেন পাবলিক জায়গায় এরকম অসভ্যতা না করি । আমি
বিনীত হয়ে জানালাম
যে আমি শুধুমাত্র পাবলিক জায়গায় নিউমোনিয়া থেকে বাঁচার
চেষ্টা করছিলাম । ওনারা
জবাবে আমাকে কফি খাবার উপদেশ দিয়ে চলে গেলেন |
এমনিতে
আমি খুব একটা কফি ভক্ত নই , কিন্তু এই প্রস্তাবটা ভালোই লাগলো । এমনিতেই
ঠান্ডা লাগছিল , পেটের আনাচেকানাচে খিদেরা উঁকি দিচ্ছিলো । আমার
৫:৩০ এর ফ্লাইট ও শুনলাম ৭:০০ ছাড়বে । এয়ারপোর্ট
এর একটা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকে পড়লাম
। রেস্টুরেন্ট
এর সুন্দরী একগাল হেসে এমনভাবে অভ্যর্থনা জানালেন যেন এতদিন উনি আমারি পথ চেয়ে বসে ছিলেন । আমি ওনাকে অনুরোধ করলাম অবিলম্বে গলদাচিংড়ির সূপ আর কাঁকড়ার বড়া দিয়ে যেতে | উনি দুঃখের সঙ্গে জানালেন যে বৈদ্যুতিক চুল্লি বন্ধ থাকায় ওনারা কিছুই রান্না করতে পারবেন না । বাধ্য হয়ে কফি চা ইত্যাদির খোঁজ করলাম । বলাই বাহুল্য , আবার নিরাশ হলাম | মরিয়া হয়ে আমি আমার দুর্দশার কথা বিশারভাবে ব্যক্ত করলাম । উনি আমায় ব্র্যান্ডি খাবার পরামর্শ দিলেন - কারণ মদ্যপান করতে বৈদ্যুতিক সহযোগিতা লাগে না । আমি একটু দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলাম , ব্র্যান্ডি খেয়ে ফ্লাইট এ ওঠা কি ঠিক হবে? যদি নেশা হয়ে যায়? মহিলা আমায় আশ্বাস দিলেন যে পোর্টল্যান্ড এ মানুষদের তিন রকম এর নেশা হয়। কারোর হয় সামুদ্রিক খাবারের নেশা, কারোর হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নেশা । কেউকেউ আবার পোর্টল্যান্ডের সুন্দরী মহিলাদের কটাক্ষের নেশায় নেশাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন । কিন্তু পোর্টল্যান্ড শহরে কাউকে মদ্যপান করে নেশাছন্ন হতে কখনো উনি শোনেন নি । আমার মুখের সন্দিহান ভাব দেখে ওনার মনে হলো আমি হয়তো কথাটা পুরোপুরি বিশ্বাস করিনি । তাই শেষমেশ উনি এটাও বললেন যে নেশা হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই, কারণ প্লেন চালানোর জন্য পাইলট আছে, আমাকে প্লেন চালাতে হবে না । ব্র্যান্ডি বা যেকোনো ধরণের মদ্যপান এর অর্ডার এর সঙ্গে যে এক প্লেট বাদাম ভাজা ফ্রি তে দেয়া হয়, একথাও উনি জানাতে ভুললেন না । এতক্ষনে ওনার চেষ্টা সফল হলো । আমরা হাজার হলেও ভারতীয় কনসিউমার ।যেকোনো জিনিস এ ফ্রি অফার থাকলে সেগুলো আমরা ছাড়তে পারিনা ।অবিলম্বে ব্র্যান্ডি অর্ডার করে পকেট থেকে ক্রেডিট কার্ড বের করে দিলাম । কিন্তু ক্রেডিট কার্ড দেখে সুন্দরীর মুখভঙ্গি অনেকটা কলকাতার বাস কন্ডাক্টরদের মতো হয়ে গেলো । ক্রেডিট কার্ড এর মেশিন ও যে অচল । খুচরো ক্যাশ ছাড়া গতি নেই । কিন্তু যাই হোক এই মহিলার কন্ডাক্ট বাস কন্ডাক্টরদের থেকে ভালোই ছিল । উনি দয়া পরবশতঃ আমাকে ফ্রি বাদাম ভাজা থেকে বঞ্চিত করেন নি । সঙ্গে কফি মেশিন থেকে প্রায় ঠান্ডা ঈষদুষ্ণ এক কাপ কফি ও খাইয়েছিলেন ।
শুনেছিলাম বাদাম খেলে নাকি বুদ্ধি বাড়ে । দেখলাম, বাদাম ভাজা খেয়ে মনে নানারকম সুবুদ্ধির উদয় হলো । প্রথমে মনে হলো গিন্নি কে অন্তত খবর দেয়া উচিত যে বাড়ি ফিরতে দেরি হবে । ঐদিন আবার মহাকালী পুজো , ভেবেছিলাম সপরিবারে ও সবান্ধবে মাঝরাতে কালীমন্দির এ গিয়ে পুজো দেখবো । কিন্তু এয়ারপোর্ট এ যা অবস্থা দেখলাম, তাতে হয়তো পৌঁছাতে দেরি হবে এই আভাস গিন্নিকে জানিয়ে রাখলাম । ইতিমধ্যে সেই বন্ধুরাও ফোন এ যোগাযোগ করা শুরু করে দিয়েছে , তাদের সবাইকেও জানাতে হলো আমার এই দুর্দশার কথা । এইসব দুর্দশার খবর দিতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম নতুন আরেকটি দুর্দশা ঘনিয়ে এসেছে । মোবাইল ফোন এ মাত্র কুড়ি % চার্জ আছে । সমস্ত এয়ারপোর্টেই আজকাল ফোন চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা থাকে বলে আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম । কে জানতো যে এয়ারপোর্ট এইরকম বিদ্যুৎ বিভ্রাট এর শিকার হবে, আর আমাকে মোবাইলহীনতার আশংকায় ভুগতে হবে !!
ক্রমশ আসে পাশে তাকিয়ে "বিগ পিকচার" টা কিছুটা বোঝার চেষ্টা করলাম । এমার্জেন্সি পাওয়ার এ কন্ট্রোল রুম , কন্ট্রোল টাওয়ার ইত্যাদি তো চলছে , তাহলে সব ফ্লাইট এ এতো দেরি কেন ? এতো ভীড় কেন ? যা বুঝলাম, এমার্জেন্সি পাওয়ার এ jetway (যেই টিউব গুলো দিয়ে যাত্রীরা হেটে হেটে এয়ারপোর্ট টার্মিনাল থেকে প্লেন এর পেটের ভেতর ঢুকে পরে ) গুলো চলছে না । তাই যাত্রীদেরকে সিঁড়ি দিয়ে হেটে টার্মিনাল থেকে মাটিতে নামতে হচ্ছে , এবং তারপরে সিঁড়ি দিয়ে হেটে প্লেন এ উঠতে হচ্ছে । ঠিক যেমন আমরা কুড়ি তিরিশ বছর আগের সিনেমা বা ছবিতে দেখতাম । টার্মিনাল এর ১৬ টা গেট এর মধ্যে মাত্র দুটো গেট এই সিঁড়ি আছে, তাই সমস্ত ফ্লাইট এই দুটো গেট দিয়েই ছাড়ছে । সেইজন্যই এতো দেরি । বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে অনুধাবন করলাম যে আমার ফ্লাইট টা এতক্ষনে পিছিয়ে ৭:৩০ হয়ে গিয়েছে, এবং ও দেখলাম যে দুপুর ৩:০০ এর ফিলাডেলফিয়ার ফ্লাইট টা এই সন্ধ্যে ৬:৩০ টা নাগাদ ছাড়বে । ভাবলাম চেষ্টা করে দেখা যাক আগের ফ্লাইট এ কোনো সিট ফাঁকা পাওয়া যায় কিনা , তাহলে ১ ঘন্টা আগেই বাড়ি যেতে পারবো । একটা আঠেরো মিনিটের ফোন কল , পঁচিশ ডলার আর ফোনের বাকি চার্জ এর পুরোটা খরচ করে ১ ঘন্টা আগের ফ্লাইট এ সিট বুক করে নিলাম । এবং নিজের এই বুদ্ধিতে নিজেই চমৎকৃত হয়ে গেলাম ।
ইতিমধ্যে আরো কিছু সময় কেটে গেলো । আমার মোবাইল ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এর মধ্যে ৬:৩০ আর ৭:৩০ এর ফ্লাইটগুলো যথা ক্রমে পিছিয়ে ৭:০০ আর ৮:০০ হয়ে গিয়েছে । জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম যে ৬:৩০ এর ফ্লাইট টি অন্ধকার রানওয়ে তে ল্যান্ড করতে গিয়ে বেকায়দায় গুতো খেয়ে সামনের চাকাটি ফাটিয়ে ফেলেছেন । চাকা বদল করার জন্য এই তিরিশ মিনিটের বাড়তি বিলম্ব । যাই হোক, এই ঠান্ডা র মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নেমে, আরেকদফা বৃষ্টিতে ভিজে প্লেন এ গিয়ে চড়লাম । সমস্ত যাত্রীরা বসলেন, দরজা বন্ধ হলো, কিন্তু প্লেন আর এগোয় না । মিনিট কুড়ি পরে ঘোষণা হলো যে আমাদের আবার এয়ারপোর্ট টার্মিনাল এ ফিরে যেতে হবে । চাকার সঙ্গে এক্সেলে আরো কিছু ক্ষতি হয়েছে, যেজন্য প্লেনটি মেরামত না করে উড়ান এ যেতে পারবে না । সমস্ত যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে গজ গজ করতে করতে টার্মিনাল এ ফিরে এলেন । আমার বিরক্তির কারণ আরো বেশি ছিল, কারণ এই দুবার বৃষ্টি ভিজে এই ফ্লাইট এ ওঠানামা করার জন্য আমায় আঠেরো মিনিটের ফোন কল , পঁচিশ ডলার আর মোবাইল ফোনের চার্জ এর পুরোটা খরচ করতে হয়েছিল ।
এয়ারপোর্ট কতৃপক্ষ এবার জানালেন যে এই বিকল হয়ে যাওয়া ফ্লাইটের সমস্ত যাত্রীরাও এক ঘন্টা পরের ফ্লাইটেই ফিরবেন । সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে । কিন্তু এই দুটি ফ্লাইটের যাত্রীদের একসঙ্গে নেয়ার জন্য আরো বড় বিমানের প্রয়োজন । তাই আমাদের পরিত্রানের জন্য ওয়াশিংটন থেকে আরেকটি বড়োসড়ো বিমানকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে । এই কারণে আমাদের ৮:০০ টার ফ্লাইট এবার ৮:৩০ এ ছাড়বে । যাত্রীদের হতাশা ও বিরক্তি দূর করতে বিকল হয়ে যাওয়া বিমানের সমস্ত খাদ্য (যেমন চিপস, কোল্ড ড্রিংক আর জুস ) বিলিয়ে দেয়া হলো যাত্রীদের মধ্যে । চার প্যাকেট চিপস হজম করে সত্যি একটু চাঙ্গা বোধ করলাম । মানসিক অবস্থার সঙ্গে দেখলাম ভাগ্য কিছুটা উন্নতি হলো । নতুন বিমান নির্ধারিত সময়ে এসে পৌছালো । আমিও একটি খুব লোভনীয় আসন লাভ করলাম - কারণ - আমার পাশের সিট এর সহযাত্রিণী একটি পাওয়ার ব্যাঙ্ক নিয়ে ঘুরছিলেন । প্লেন ছাড়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ওনার সঙ্গে আলাপ জমিয়ে নিয়ে আমি ওনার পাওয়ার ব্যাঙ্ক এর সাহায্যে আমার মৃত মোবাইলকে আবার পুনর্জন্ম দান করলাম ।
নির্ধারিত দেড় ঘন্টার জায়গায় আমাদের আড়াই ঘন্টা লাগলো ফিলাডেলফিয়া পৌঁছাতে । শুনলাম যে ওয়াশিংটন থেকে আসার পথে নাকি ঝোড়ো আবহাওয়ায় এই বিমান এর একটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল । তাই আমাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পাইলট সাহেব একটি ইঞ্জিন এর সাহায্যেই আমাদের উড়িয়ে এনেছেন । তাই একটু ধীর গতিতে উনি বিমান উড়িয়েছেন । না না , আমাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ ছিল না । কারণ দুটি ইঞ্জিন বিকল হলেও নাকি অক্সিলারি ইঞ্জিনের এর সাহায্যে বিমান যেকোনো নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট এ নামতে পারে । তাই আমরা খুবই নিরাপদেই এসে পৌঁছেছি, আমাদের বিন্দুমাত্র বিপদের আশংকা ছিল না । মনে মনে ঈশ্বরকে অশেষ ধন্যবাদ দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেরোলাম, এবং বাড়ির দিকে রওনা হলাম ।
প্রায় ৪ ঘন্টা কোনো রকম ফোন এর সংযোগ না থাকায় গিন্নি খুবই উৎকণ্ঠায় ছিলেন । ওনাকে ফোন করে আস্বস্ত করলাম । বলাই বাহুল্য যে সেই রাতে আর মন্দিরে গিয়ে কালীপুজো দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি । আমার কিছু বন্ধুর ধারণা, আমি মহা গুলবাজ, আমার কোনো কথাতেই ভরসা করা যায়না । আমি মন্দির এ পুজো দেখবো না বলে এরকম একটা মনগড়া গল্প তৈরী করেছিলাম । আবার কিছু বন্ধুর ধারণা যে আমি এতই অলস যে আমি সময়মতো এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে পারিনি আর তাই নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ধরতে পারিনি , এবং পরের ফ্লাইট এ ফিরেছি । আমেরিকার মতো দেশে যে এয়ারপোর্ট এ বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটা সম্ভব, এটা বিশ্বাস করা সত্যি খুব কঠিন । এই কঠিন কাজটি সহজ করার জন্য আমি সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইট এ প্রকাশ হওয়া এই ঘটনার বিবরণটিও আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম :
http://www.mainebiz.biz/article/20181107/NEWS0101/181109963/jetport-flights-delayed-after-traffic-accident-knocks-out-power
শুনেছিলাম বাদাম খেলে নাকি বুদ্ধি বাড়ে । দেখলাম, বাদাম ভাজা খেয়ে মনে নানারকম সুবুদ্ধির উদয় হলো । প্রথমে মনে হলো গিন্নি কে অন্তত খবর দেয়া উচিত যে বাড়ি ফিরতে দেরি হবে । ঐদিন আবার মহাকালী পুজো , ভেবেছিলাম সপরিবারে ও সবান্ধবে মাঝরাতে কালীমন্দির এ গিয়ে পুজো দেখবো । কিন্তু এয়ারপোর্ট এ যা অবস্থা দেখলাম, তাতে হয়তো পৌঁছাতে দেরি হবে এই আভাস গিন্নিকে জানিয়ে রাখলাম । ইতিমধ্যে সেই বন্ধুরাও ফোন এ যোগাযোগ করা শুরু করে দিয়েছে , তাদের সবাইকেও জানাতে হলো আমার এই দুর্দশার কথা । এইসব দুর্দশার খবর দিতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম নতুন আরেকটি দুর্দশা ঘনিয়ে এসেছে । মোবাইল ফোন এ মাত্র কুড়ি % চার্জ আছে । সমস্ত এয়ারপোর্টেই আজকাল ফোন চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা থাকে বলে আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম । কে জানতো যে এয়ারপোর্ট এইরকম বিদ্যুৎ বিভ্রাট এর শিকার হবে, আর আমাকে মোবাইলহীনতার আশংকায় ভুগতে হবে !!
ক্রমশ আসে পাশে তাকিয়ে "বিগ পিকচার" টা কিছুটা বোঝার চেষ্টা করলাম । এমার্জেন্সি পাওয়ার এ কন্ট্রোল রুম , কন্ট্রোল টাওয়ার ইত্যাদি তো চলছে , তাহলে সব ফ্লাইট এ এতো দেরি কেন ? এতো ভীড় কেন ? যা বুঝলাম, এমার্জেন্সি পাওয়ার এ jetway (যেই টিউব গুলো দিয়ে যাত্রীরা হেটে হেটে এয়ারপোর্ট টার্মিনাল থেকে প্লেন এর পেটের ভেতর ঢুকে পরে ) গুলো চলছে না । তাই যাত্রীদেরকে সিঁড়ি দিয়ে হেটে টার্মিনাল থেকে মাটিতে নামতে হচ্ছে , এবং তারপরে সিঁড়ি দিয়ে হেটে প্লেন এ উঠতে হচ্ছে । ঠিক যেমন আমরা কুড়ি তিরিশ বছর আগের সিনেমা বা ছবিতে দেখতাম । টার্মিনাল এর ১৬ টা গেট এর মধ্যে মাত্র দুটো গেট এই সিঁড়ি আছে, তাই সমস্ত ফ্লাইট এই দুটো গেট দিয়েই ছাড়ছে । সেইজন্যই এতো দেরি । বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে অনুধাবন করলাম যে আমার ফ্লাইট টা এতক্ষনে পিছিয়ে ৭:৩০ হয়ে গিয়েছে, এবং ও দেখলাম যে দুপুর ৩:০০ এর ফিলাডেলফিয়ার ফ্লাইট টা এই সন্ধ্যে ৬:৩০ টা নাগাদ ছাড়বে । ভাবলাম চেষ্টা করে দেখা যাক আগের ফ্লাইট এ কোনো সিট ফাঁকা পাওয়া যায় কিনা , তাহলে ১ ঘন্টা আগেই বাড়ি যেতে পারবো । একটা আঠেরো মিনিটের ফোন কল , পঁচিশ ডলার আর ফোনের বাকি চার্জ এর পুরোটা খরচ করে ১ ঘন্টা আগের ফ্লাইট এ সিট বুক করে নিলাম । এবং নিজের এই বুদ্ধিতে নিজেই চমৎকৃত হয়ে গেলাম ।
ইতিমধ্যে আরো কিছু সময় কেটে গেলো । আমার মোবাইল ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এর মধ্যে ৬:৩০ আর ৭:৩০ এর ফ্লাইটগুলো যথা ক্রমে পিছিয়ে ৭:০০ আর ৮:০০ হয়ে গিয়েছে । জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম যে ৬:৩০ এর ফ্লাইট টি অন্ধকার রানওয়ে তে ল্যান্ড করতে গিয়ে বেকায়দায় গুতো খেয়ে সামনের চাকাটি ফাটিয়ে ফেলেছেন । চাকা বদল করার জন্য এই তিরিশ মিনিটের বাড়তি বিলম্ব । যাই হোক, এই ঠান্ডা র মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নেমে, আরেকদফা বৃষ্টিতে ভিজে প্লেন এ গিয়ে চড়লাম । সমস্ত যাত্রীরা বসলেন, দরজা বন্ধ হলো, কিন্তু প্লেন আর এগোয় না । মিনিট কুড়ি পরে ঘোষণা হলো যে আমাদের আবার এয়ারপোর্ট টার্মিনাল এ ফিরে যেতে হবে । চাকার সঙ্গে এক্সেলে আরো কিছু ক্ষতি হয়েছে, যেজন্য প্লেনটি মেরামত না করে উড়ান এ যেতে পারবে না । সমস্ত যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে গজ গজ করতে করতে টার্মিনাল এ ফিরে এলেন । আমার বিরক্তির কারণ আরো বেশি ছিল, কারণ এই দুবার বৃষ্টি ভিজে এই ফ্লাইট এ ওঠানামা করার জন্য আমায় আঠেরো মিনিটের ফোন কল , পঁচিশ ডলার আর মোবাইল ফোনের চার্জ এর পুরোটা খরচ করতে হয়েছিল ।
এয়ারপোর্ট কতৃপক্ষ এবার জানালেন যে এই বিকল হয়ে যাওয়া ফ্লাইটের সমস্ত যাত্রীরাও এক ঘন্টা পরের ফ্লাইটেই ফিরবেন । সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে । কিন্তু এই দুটি ফ্লাইটের যাত্রীদের একসঙ্গে নেয়ার জন্য আরো বড় বিমানের প্রয়োজন । তাই আমাদের পরিত্রানের জন্য ওয়াশিংটন থেকে আরেকটি বড়োসড়ো বিমানকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে । এই কারণে আমাদের ৮:০০ টার ফ্লাইট এবার ৮:৩০ এ ছাড়বে । যাত্রীদের হতাশা ও বিরক্তি দূর করতে বিকল হয়ে যাওয়া বিমানের সমস্ত খাদ্য (যেমন চিপস, কোল্ড ড্রিংক আর জুস ) বিলিয়ে দেয়া হলো যাত্রীদের মধ্যে । চার প্যাকেট চিপস হজম করে সত্যি একটু চাঙ্গা বোধ করলাম । মানসিক অবস্থার সঙ্গে দেখলাম ভাগ্য কিছুটা উন্নতি হলো । নতুন বিমান নির্ধারিত সময়ে এসে পৌছালো । আমিও একটি খুব লোভনীয় আসন লাভ করলাম - কারণ - আমার পাশের সিট এর সহযাত্রিণী একটি পাওয়ার ব্যাঙ্ক নিয়ে ঘুরছিলেন । প্লেন ছাড়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ওনার সঙ্গে আলাপ জমিয়ে নিয়ে আমি ওনার পাওয়ার ব্যাঙ্ক এর সাহায্যে আমার মৃত মোবাইলকে আবার পুনর্জন্ম দান করলাম ।
নির্ধারিত দেড় ঘন্টার জায়গায় আমাদের আড়াই ঘন্টা লাগলো ফিলাডেলফিয়া পৌঁছাতে । শুনলাম যে ওয়াশিংটন থেকে আসার পথে নাকি ঝোড়ো আবহাওয়ায় এই বিমান এর একটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল । তাই আমাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পাইলট সাহেব একটি ইঞ্জিন এর সাহায্যেই আমাদের উড়িয়ে এনেছেন । তাই একটু ধীর গতিতে উনি বিমান উড়িয়েছেন । না না , আমাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ ছিল না । কারণ দুটি ইঞ্জিন বিকল হলেও নাকি অক্সিলারি ইঞ্জিনের এর সাহায্যে বিমান যেকোনো নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট এ নামতে পারে । তাই আমরা খুবই নিরাপদেই এসে পৌঁছেছি, আমাদের বিন্দুমাত্র বিপদের আশংকা ছিল না । মনে মনে ঈশ্বরকে অশেষ ধন্যবাদ দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেরোলাম, এবং বাড়ির দিকে রওনা হলাম ।
প্রায় ৪ ঘন্টা কোনো রকম ফোন এর সংযোগ না থাকায় গিন্নি খুবই উৎকণ্ঠায় ছিলেন । ওনাকে ফোন করে আস্বস্ত করলাম । বলাই বাহুল্য যে সেই রাতে আর মন্দিরে গিয়ে কালীপুজো দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি । আমার কিছু বন্ধুর ধারণা, আমি মহা গুলবাজ, আমার কোনো কথাতেই ভরসা করা যায়না । আমি মন্দির এ পুজো দেখবো না বলে এরকম একটা মনগড়া গল্প তৈরী করেছিলাম । আবার কিছু বন্ধুর ধারণা যে আমি এতই অলস যে আমি সময়মতো এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে পারিনি আর তাই নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ধরতে পারিনি , এবং পরের ফ্লাইট এ ফিরেছি । আমেরিকার মতো দেশে যে এয়ারপোর্ট এ বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটা সম্ভব, এটা বিশ্বাস করা সত্যি খুব কঠিন । এই কঠিন কাজটি সহজ করার জন্য আমি সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইট এ প্রকাশ হওয়া এই ঘটনার বিবরণটিও আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম :
http://www.mainebiz.biz/article/20181107/NEWS0101/181109963/jetport-flights-delayed-after-traffic-accident-knocks-out-power
Experiences would be same for many people, but not many people can express their thoughts in such a way. Now we are reading it and laughing (may be), but people who actually faced the situation would react differently.....great job!!!
ReplyDeleteSuch an experience 😊. Nicely expressed in a fluent and engaging flow. Very good sense of humor. Will wait for more in coming days.
ReplyDeletechuranto jake bole. "Loading Zone-e Loadshedding"..jata ekkere
ReplyDeleteদারুন। এক নিমেষে পরে শেষ করে ফেল্লাম।
ReplyDelete