Sunday, November 18, 2018

বিমানবন্দরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট



পর্যটকদের প্রিয় শহর পোর্টল্যান্ড  আমেরিকার উত্তর পূর্ব অঞ্চলে মেইন রাজ্যে অবস্থিত এই শহর টি একদিকে সামুদ্রিক খাবার , অন্য দিকে Acadia  ন্যাশনাল পার্কের দ্বারদেশ হিসেবে পরিচিত   তাই হঠাৎ যখন অফিসের কাজ নিয়ে দুদিন পোর্টল্যান্ড যেতে হবে শুনলাম , মনে মনে অত্যন্ত পুলকিত হয়ে উঠলাম দুদিন ধরে সামুদ্রিক খাবার খাবো আর সেই সঙ্গে পাহাড় সমুদ্রের ধারে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলবো ভেবেই "সুদূরের পিয়াসী " মনটা বেশ "চঞ্চল" হয়ে উঠলো


প্রথম দুদিন মনের আনন্দে বিভিন্ন প্রকার এর গলদা চিংড়ি আর কাঁকড়া খেয়ে কাটালাম পোর্টল্যান্ড অফিসের লোকজন দেখলাম খুবই আন্তরিক প্রথম দেখাতেই ওনারা বিখ্যাত সব স্থানীয় খাবার আর রেস্তোরার সন্ধান দিলেন তারপর থেকে নিয়মিত ভাবে ওনারা খোঁজ নিতেন সেই সব খাবার খেয়েছি কিনা যদিও ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা টি সফল হলো না প্রথম দিন ভীষণ ঠান্ডা এবং দ্বিতীয় দিন থেকে বৃষ্টি যোগ হওয়ায় আমি হোটেল এর নিরাপদ আশ্রয়ে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেছিলাম   


এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে দেখলাম ঝোড়ো আবহাওয়া , সঙ্গে বৃষ্টি । ভাড়া গাড়িতে তেল ভরার জন্য নামতে হলো , আর মুহূর্তে ভিজে গেলাম ।  ওই  ঠান্ডাতে ভেজা জ্যাকেট টুপি আর সোয়েটার পড়ে আধ ঘন্টা গাড়ি চালানোটা মনে হয়েছিল চরম দুর্গতি । কিন্তু পরে  বুঝেছিলাম যে আগামী কিছু ঘন্টার তুলনায় এই আধ  ঘন্টা কিছুই নয় । এয়ারপোর্ট ঢুকে  মনে হলো যেন কোনো মৃত্যুপুরীতে প্রবেশ করছি  ।চারদিকে একটা গা ছমছম করাঅন্ধকার । গাড়ি  ফেরত  দেয়ার  কাউন্টারে  গিয়ে শুনলাম যে  একটা ট্রাক নাকি ঝড়ের মধ্যে  দিকভ্রষ্ট  হয়ে  একটা  ইলেকট্রিক  পোলে  ধাক্কা  মেরেছে  । তার  ফলস্বরূপ  সমস্ত  এলাকায়  বিদ্যুৎ  বিপর্যয়  ঘটেছে । 


ছোটবেলায় কলকাতায় বড়ো হয়েছি লোডশেডিং এর অনেক স্মৃতি আছে  ছোটবেলা থেকেই বিদ্যুৎ বিভ্রাট মানেই ছিল পড়াশোনা থেকে ছুটি , বারান্দা বা ছাদ বসে রাতের সৌন্দর্য্য বা চাঁদের আলো দেখে মুগ্ধ হওয়া কিন্তু দেখলাম এয়ারপোর্ট বিদ্যুৎ বিভ্রাট মোটেই এরকম সুখকর কিছু নয় ভাড়া গাড়ি ফেরত দেয়ার সময় জানতে পারলাম যে কম্পিউটার চলছে না , তাই ওনারা আমায় রশিদ দিতে পারবেন না কোম্পানির  কাজে এসেছি তাই রশিদ ছাড়া টাকা পাবো না ভেবে মন ব্যাকুল হয়ে উঠলো কাউন্টার এর ভদ্রলোক জানালেন যে আমি যদি কারেন্ট আসা অবধি অপেক্ষা করি  তাহলে অতি আনন্দের সঙ্গেই উনি আমায় রশিদ দেবেন ভেবে দেখলাম যে রশিদ এর জন্য প্লেন ছেড়ে দেয়া যায় না   তাই রশিদ এর মায়া   ত্যাগ করে চেক ইন করতে অগ্রসর হলাম


চেক ইন কাউন্টার দেখি একই অবস্থা কোনো কম্পিউটার কাজ হচ্ছে না  এমার্জেন্সি সিস্টেমে শুধু এয়ারপোর্ট এর কনভেয়র বেল্ট , কন্ট্রোল রুম কন্ট্রোল টাওয়ার এর লাইট ইত্যাদি চলছে আর সেই সঙ্গে গুটিকতক সিলিং এর লাইট জ্বলছে আজকাল আমরা যেরকম মেশিন ক্রেডিট কার্ড বা নাম দিয়ে বোর্ডিং পাস প্রিন্ট করি সেই রাস্তা বন্ধ লোকজন এক এক করে কাউন্টার যাচ্ছে , কাউন্টার এর মহিলা ফোন করে হেড অফিস থেকে জেনে নিচ্ছেন সেই যাত্রীর কত নম্বর সিট তারপরে সাদা কাগজে সেই  যাত্রীর নাম আর সিট নম্বর লিখে মহিলা সই করে স্ট্যাম্প মারছেন একদম যেন ত্রিশ বছর আগের অবস্থা বলাই বাহুল্য যে এই  চেক ইন পদ্ধতি   গুন্ বেশি সময় নিচ্ছে  তাই সমস্ত এয়ারপোর্টেই প্রচুর ভীড় , প্রচুর লাইন , আর সেই সঙ্গে লোকজনের প্রচুর বিরক্তি  বিরক্তির আরেকটা কারণ এমার্জেন্সি পাওয়ার এ এসি মেশিন চলছে না । তাই যাত্রীগণ অনেকেই এই গুমোট আবহাওয়ায় ঘামছেন, এবং আরো বিরক্ত হচ্ছেন । চেক ইন কাউন্টার এর সংকীর্ণ জায়গায় প্রচুর যাত্রীর এই ঘর্মাক্ত পরিস্থিতি, পুরো জায়গাটাকে আরো  বিরক্তিকর করে তুলছে । 


সিকিউরিটি চেক এর অবস্থাও দেখলাম বিশেষ ভালো নয় | পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স স্ক্যান করে সমস্ত ঠিকুজি কুষ্ঠি বার করে ফেলা মেশিন গুলো আজ অচল । একজন বৃদ্ধ সিকিউরিটি অফিসার দুতিন রকম নীল বেগুনি আলোর টর্চ নিয়ে সবার পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন । ওনার মুখে গর্ব ও তৃপ্তি মিশ্রিত অভিব্যক্তি । আধুনিক যুগের মেশিন এর সঙ্গে আধুনিক যুগের সিকিউরিটি অফিসার গণও এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে অচল হয়ে গেছেন । সবাই দল বেঁধে ওই বৃদ্ধ সিকিউরিটি অফিসার এর পেছনে দাঁড়িয়ে শিখছেন কিভাবে মেশিন ছাড়াও জাল পাসপোর্ট বা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ধরা যায় |


যাই হোক প্রায় দুঘন্টা ভেজা জামাকাপড় পরে ছিলাম সিকিউরিটি চেক এর পরে ভাবলাম বাথরুম কাপড় বদলে নেবো সেখানেও দেখি ঘোর বিপদ  বাথরুমের অল্প আলোতে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া এড়াতে কতৃপক্ষ বেশিরভাগ বাথরুম বন্ধ রেখেছেন   শুধুমাত্র একটি বাথরুম এমার্জেন্সি আলোতে উদ্ভাসিত   বলাইবাহুল্য সেখানে বিশাল  লাইন হতাশ হয়ে এয়ারপোর্টের একটা কোনায় গিয়ে ব্যাগ খুলে পোশাক বদল করা শুরু করলাম হঠাৎ করে সেই অন্ধকারের মধ্যেও দুজন এয়ারপোর্ট কর্মী এসে আমায় শাসিয়ে গেলেন যে আমি যেন পাবলিক জায়গায় এরকম অসভ্যতা না করি আমি বিনীত হয়ে  জানালাম যে আমি শুধুমাত্র পাবলিক জায়গায় নিউমোনিয়া থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিলাম ওনারা জবাবে আমাকে কফি খাবার উপদেশ দিয়ে চলে গেলেন  |


এমনিতে আমি খুব একটা কফি ভক্ত নই , কিন্তু এই প্রস্তাবটা ভালোই লাগলো এমনিতেই ঠান্ডা লাগছিল , পেটের আনাচেকানাচে খিদেরা উঁকি দিচ্ছিলো আমার :৩০ এর ফ্লাইট শুনলাম :০০ ছাড়বে এয়ারপোর্ট এর একটা রেস্টুরেন্ট ঢুকে পড়লাম রেস্টুরেন্ট এর  সুন্দরী একগাল হেসে এমনভাবে অভ্যর্থনা  জানালেন যেন এতদিন উনি আমারি পথ চেয়ে বসে ছিলেনআমি ওনাকে অনুরোধ করলাম অবিলম্বে গলদাচিংড়ির সূপ আর কাঁকড়ার বড়া দিয়ে যেতে | উনি দুঃখের সঙ্গে জানালেন যে বৈদ্যুতিক  চুল্লি বন্ধ থাকায় ওনারা কিছুই রান্না করতে পারবেন না  বাধ্য হয়ে কফি চা ইত্যাদির খোঁজ করলামবলাই বাহুল্য , আবার নিরাশ হলাম | মরিয়া হয়ে আমি আমার দুর্দশার  কথা বিশারভাবে ব্যক্ত করলাম । উনি আমায় ব্র্যান্ডি খাবার  পরামর্শ দিলেন - কারণ মদ্যপান করতে বৈদ্যুতিক সহযোগিতা লাগে না । আমি একটু দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলাম , ব্র্যান্ডি খেয়ে ফ্লাইট এ ওঠা কি ঠিক হবে? যদি নেশা হয়ে যায়? মহিলা আমায় আশ্বাস দিলেন যে পোর্টল্যান্ড এ মানুষদের তিন রকম এর নেশা হয়। কারোর হয় সামুদ্রিক খাবারের নেশা, কারোর হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নেশা । কেউকেউ আবার পোর্টল্যান্ডের সুন্দরী মহিলাদের কটাক্ষের নেশায় নেশাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন ।  কিন্তু পোর্টল্যান্ড শহরে কাউকে মদ্যপান করে নেশাছন্ন হতে কখনো উনি শোনেন নি । আমার মুখের সন্দিহান ভাব দেখে ওনার মনে হলো আমি হয়তো কথাটা পুরোপুরি বিশ্বাস করিনি । তাই শেষমেশ উনি এটাও বললেন যে নেশা হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই, কারণ প্লেন চালানোর জন্য পাইলট আছে, আমাকে প্লেন চালাতে হবে না । ব্র্যান্ডি বা যেকোনো ধরণের মদ্যপান এর অর্ডার এর সঙ্গে যে এক প্লেট বাদাম ভাজা ফ্রি তে দেয়া হয়, একথাও উনি জানাতে ভুললেন না । এতক্ষনে ওনার চেষ্টা সফল হলো । আমরা হাজার হলেও ভারতীয় কনসিউমার ।যেকোনো জিনিস এ ফ্রি অফার থাকলে সেগুলো আমরা ছাড়তে পারিনা ।অবিলম্বে ব্র্যান্ডি অর্ডার করে পকেট থেকে ক্রেডিট কার্ড বের করে দিলাম । কিন্তু ক্রেডিট কার্ড দেখে সুন্দরীর মুখভঙ্গি অনেকটা কলকাতার  বাস কন্ডাক্টরদের  মতো হয়ে গেলো । ক্রেডিট কার্ড এর মেশিন  ও যে অচল । খুচরো ক্যাশ  ছাড়া গতি নেই । কিন্তু যাই হোক এই মহিলার কন্ডাক্ট বাস কন্ডাক্টরদের থেকে ভালোই  ছিল । উনি দয়া পরবশতঃ  আমাকে ফ্রি বাদাম ভাজা থেকে বঞ্চিত করেন নি । সঙ্গে কফি মেশিন থেকে প্রায় ঠান্ডা ঈষদুষ্ণ এক  কাপ কফি ও খাইয়েছিলেন ।     


শুনেছিলাম বাদাম খেলে নাকি বুদ্ধি বাড়ে । দেখলাম, বাদাম ভাজা খেয়ে মনে নানারকম সুবুদ্ধির উদয় হলো । প্রথমে মনে হলো গিন্নি কে অন্তত খবর দেয়া উচিত যে বাড়ি ফিরতে দেরি হবে । ঐদিন আবার মহাকালী পুজো , ভেবেছিলাম সপরিবারে ও সবান্ধবে মাঝরাতে কালীমন্দির এ গিয়ে পুজো দেখবো । কিন্তু এয়ারপোর্ট এ যা অবস্থা দেখলাম, তাতে হয়তো পৌঁছাতে দেরি হবে এই আভাস গিন্নিকে জানিয়ে রাখলাম । ইতিমধ্যে সেই বন্ধুরাও ফোন এ যোগাযোগ করা শুরু করে দিয়েছে , তাদের সবাইকেও জানাতে হলো আমার এই দুর্দশার কথা । এইসব দুর্দশার খবর দিতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম নতুন আরেকটি দুর্দশা ঘনিয়ে এসেছে । মোবাইল ফোন এ মাত্র কুড়ি % চার্জ আছে । সমস্ত এয়ারপোর্টেই আজকাল ফোন চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা থাকে বলে আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম । কে জানতো যে এয়ারপোর্ট এইরকম বিদ্যুৎ বিভ্রাট এর শিকার হবে, আর আমাকে মোবাইলহীনতার আশংকায় ভুগতে হবে !!



ক্রমশ আসে পাশে তাকিয়ে "বিগ পিকচার" টা কিছুটা বোঝার চেষ্টা করলাম । এমার্জেন্সি পাওয়ার এ কন্ট্রোল রুম , কন্ট্রোল টাওয়ার ইত্যাদি তো চলছে , তাহলে সব ফ্লাইট এ এতো দেরি কেন ? এতো ভীড় কেন ? যা বুঝলাম, এমার্জেন্সি পাওয়ার এ jetway (যেই টিউব গুলো দিয়ে যাত্রীরা হেটে হেটে এয়ারপোর্ট টার্মিনাল থেকে প্লেন এর পেটের ভেতর ঢুকে পরে  ) গুলো চলছে না । তাই যাত্রীদেরকে সিঁড়ি দিয়ে হেটে টার্মিনাল থেকে মাটিতে নামতে হচ্ছে , এবং তারপরে সিঁড়ি দিয়ে হেটে প্লেন এ উঠতে হচ্ছে । ঠিক যেমন আমরা কুড়ি তিরিশ বছর আগের সিনেমা বা ছবিতে দেখতাম । টার্মিনাল এর ১৬ টা গেট এর মধ্যে মাত্র দুটো গেট এই সিঁড়ি আছে, তাই সমস্ত ফ্লাইট এই দুটো গেট দিয়েই ছাড়ছে । সেইজন্যই এতো দেরি । বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে অনুধাবন করলাম যে আমার ফ্লাইট টা এতক্ষনে পিছিয়ে ৭:৩০ হয়ে গিয়েছে, এবং ও দেখলাম যে দুপুর ৩:০০ এর ফিলাডেলফিয়ার  ফ্লাইট টা এই সন্ধ্যে ৬:৩০ টা নাগাদ ছাড়বে । ভাবলাম চেষ্টা করে দেখা যাক আগের ফ্লাইট এ কোনো সিট ফাঁকা পাওয়া যায় কিনা , তাহলে ১ ঘন্টা আগেই বাড়ি যেতে পারবো । একটা আঠেরো মিনিটের ফোন কল , পঁচিশ ডলার আর ফোনের বাকি চার্জ এর পুরোটা খরচ করে ১ ঘন্টা আগের ফ্লাইট এ সিট বুক করে নিলাম । এবং নিজের এই বুদ্ধিতে নিজেই চমৎকৃত হয়ে গেলাম । 


ইতিমধ্যে আরো কিছু সময় কেটে গেলো । আমার মোবাইল ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এর মধ্যে ৬:৩০ আর ৭:৩০ এর ফ্লাইটগুলো যথা ক্রমে পিছিয়ে ৭:০০ আর ৮:০০ হয়ে গিয়েছে । জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম যে ৬:৩০ এর ফ্লাইট টি অন্ধকার রানওয়ে তে ল্যান্ড করতে গিয়ে বেকায়দায় গুতো খেয়ে সামনের চাকাটি ফাটিয়ে ফেলেছেন । চাকা বদল করার জন্য এই তিরিশ মিনিটের বাড়তি বিলম্ব । যাই হোক, এই ঠান্ডা র মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নেমে, আরেকদফা বৃষ্টিতে ভিজে প্লেন এ গিয়ে চড়লাম । সমস্ত যাত্রীরা বসলেন, দরজা বন্ধ হলো, কিন্তু প্লেন আর এগোয় না । মিনিট কুড়ি পরে ঘোষণা হলো যে আমাদের আবার এয়ারপোর্ট টার্মিনাল এ ফিরে যেতে হবে । চাকার সঙ্গে এক্সেলে আরো কিছু ক্ষতি হয়েছে, যেজন্য প্লেনটি মেরামত না করে উড়ান এ যেতে পারবে না । সমস্ত যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে গজ গজ করতে করতে টার্মিনাল এ ফিরে এলেন । আমার বিরক্তির কারণ আরো বেশি ছিল, কারণ এই দুবার বৃষ্টি ভিজে এই ফ্লাইট এ ওঠানামা করার জন্য আমায় আঠেরো মিনিটের ফোন কল , পঁচিশ ডলার আর মোবাইল ফোনের চার্জ এর পুরোটা খরচ করতে হয়েছিল ।


এয়ারপোর্ট কতৃপক্ষ এবার জানালেন যে এই বিকল হয়ে যাওয়া ফ্লাইটের সমস্ত যাত্রীরাও এক ঘন্টা পরের ফ্লাইটেই ফিরবেন । সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে । কিন্তু এই দুটি ফ্লাইটের যাত্রীদের একসঙ্গে নেয়ার জন্য আরো বড় বিমানের প্রয়োজন । তাই আমাদের পরিত্রানের জন্য ওয়াশিংটন থেকে আরেকটি বড়োসড়ো বিমানকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে । এই কারণে আমাদের ৮:০০ টার ফ্লাইট এবার ৮:৩০ এ ছাড়বে । যাত্রীদের হতাশা ও বিরক্তি দূর করতে বিকল হয়ে যাওয়া বিমানের সমস্ত খাদ্য (যেমন চিপস, কোল্ড ড্রিংক আর জুস ) বিলিয়ে দেয়া হলো যাত্রীদের মধ্যে । চার প্যাকেট চিপস হজম করে সত্যি একটু চাঙ্গা বোধ করলাম । মানসিক অবস্থার সঙ্গে দেখলাম ভাগ্য কিছুটা উন্নতি হলো । নতুন  বিমান নির্ধারিত সময়ে এসে পৌছালো । আমিও একটি খুব লোভনীয় আসন লাভ করলাম - কারণ -  আমার পাশের সিট এর সহযাত্রিণী একটি পাওয়ার ব্যাঙ্ক নিয়ে ঘুরছিলেন ।  প্লেন ছাড়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ওনার সঙ্গে আলাপ জমিয়ে নিয়ে আমি ওনার পাওয়ার ব্যাঙ্ক এর সাহায্যে আমার মৃত মোবাইলকে আবার পুনর্জন্ম দান করলাম ।


নির্ধারিত দেড় ঘন্টার জায়গায় আমাদের আড়াই ঘন্টা লাগলো ফিলাডেলফিয়া পৌঁছাতে ।  শুনলাম যে ওয়াশিংটন থেকে আসার পথে নাকি ঝোড়ো আবহাওয়ায় এই বিমান এর একটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল । তাই আমাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পাইলট সাহেব একটি ইঞ্জিন এর সাহায্যেই আমাদের উড়িয়ে এনেছেন । তাই একটু ধীর গতিতে উনি বিমান উড়িয়েছেন । না না , আমাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ ছিল না । কারণ দুটি ইঞ্জিন বিকল হলেও নাকি অক্সিলারি ইঞ্জিনের এর সাহায্যে বিমান যেকোনো নিকটবর্তী এয়ারপোর্ট এ নামতে পারে । তাই আমরা খুবই নিরাপদেই এসে পৌঁছেছি, আমাদের বিন্দুমাত্র বিপদের আশংকা ছিল না । মনে মনে ঈশ্বরকে অশেষ ধন্যবাদ  দিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে বেরোলাম, এবং বাড়ির দিকে রওনা হলাম ।


প্রায় ৪ ঘন্টা কোনো রকম ফোন এর সংযোগ না থাকায় গিন্নি খুবই উৎকণ্ঠায় ছিলেন । ওনাকে ফোন করে আস্বস্ত করলাম । বলাই বাহুল্য যে সেই রাতে আর মন্দিরে গিয়ে কালীপুজো দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি । আমার কিছু বন্ধুর ধারণা, আমি মহা গুলবাজ, আমার কোনো কথাতেই ভরসা করা যায়না । আমি মন্দির এ পুজো দেখবো না বলে এরকম একটা মনগড়া গল্প তৈরী করেছিলাম । আবার কিছু বন্ধুর ধারণা যে আমি এতই অলস যে আমি সময়মতো এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে পারিনি আর তাই নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ধরতে পারিনি , এবং পরের ফ্লাইট এ ফিরেছি । আমেরিকার মতো দেশে যে এয়ারপোর্ট এ বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটা সম্ভব, এটা বিশ্বাস করা সত্যি খুব কঠিন । এই কঠিন কাজটি সহজ করার জন্য আমি সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইট এ প্রকাশ হওয়া এই ঘটনার বিবরণটিও আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম  :
 http://www.mainebiz.biz/article/20181107/NEWS0101/181109963/jetport-flights-delayed-after-traffic-accident-knocks-out-power

4 comments:

  1. Experiences would be same for many people, but not many people can express their thoughts in such a way. Now we are reading it and laughing (may be), but people who actually faced the situation would react differently.....great job!!!

    ReplyDelete
  2. Such an experience 😊. Nicely expressed in a fluent and engaging flow. Very good sense of humor. Will wait for more in coming days.

    ReplyDelete
  3. churanto jake bole. "Loading Zone-e Loadshedding"..jata ekkere

    ReplyDelete
  4. দারুন। এক নিমেষে পরে শেষ করে ফেল্লাম।

    ReplyDelete

বিদেশে বাণী বন্দনা

  প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে, বিশেষত আমেরিকার প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে , বাঙালিয়ানা আর সংস্কৃতি নিয়ে চর্চা টা একটু বেশি রকমের হয়ে থাকে। কলকাতায় ...